রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :
মানিকগঞ্জে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে ফিরোজা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টার। দীর্ঘদিন যাবৎ পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে ঘষামাজা করেই চলছে হাসপাতালটি। প্রশাসনের নাকের ডগায় থাকলেও এ যেন দেখার কেউ নাই । প্রতিনিয়ত হচ্ছে অপচিকিৎসা ঘটছে মৃত্যু। এ প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সেবা মানহীন। বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চাহিদার নুন্যতমও বিদ্যমান নেই এ প্রতিষ্ঠানে।
অভিযোগ রয়েছে, মূলত সদর হাসপাতাল থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ভাগিয়ে এনে চিকিৎসার নামে প্রতারণার ব্যবসা করাই এই হাসপাতালের কাজ। তার পরও স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর মদতে অনুমোদন পায় এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে গত তিন বছর রেজিষ্ট্রেশন নবায়ন না করেই সিভিল সার্জন অফিস ম্যানেজ করে চিকিৎসাসেবার নামে রমরমা প্রতারণার ব্যবসা করছে এ প্রতিষ্ঠানটি ।
সিভিল সার্জনের নাকের ডগায় বিধিবহির্ভূত ও মানহীন এই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠায় প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসায় ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। কিন্তু এগুলোর তদারকি বা মান নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। ফলে চিকিৎসা পাওয়ার বদলে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এ প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই প্রয়োজনীয় ভৌত (কক্ষ) সুবিধা নেই। নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নেই ডিউটি ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, টেকনিশিয়ান, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রয়োজনীয় জনবল এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও নেই এই প্রতিষ্ঠানে। বলতে গেলে প্রয়োজনীয় চাহিদার নুন্যতম সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান নেই । তার পরও এ প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য বিভাগের নিবন্ধন পেয়েছে, নবায়নের পক্রিয়া চলছে। আর এর সুবাদে উন্নত চিকিৎসাসেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসা করছে ।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন পেতে প্রয়োজনীয় ভৌত সুবিধা, সার্বক্ষণিক ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনারসহ প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ থাকা আবশ্যক। সূত্রমতে, ১০ বেডের একটি ক্লিনিকের অনুমোদনের ক্ষেত্রে শুধু রোগীর ওয়ার্ডের জন্য প্রতি বেডে ৮০ বর্গফুট করে মোট ৮০০ বর্গফুট জায়গা লাগবে। সেই সঙ্গে ওটি রুম, পোস্ট ওপারেটিভ রুম, ওয়াস রুম, যন্ত্রপাতি কক্ষ, লেবার রুম, ডক্টরস ডিউটি রুম, নার্সেস ডিউটি রুম, অপেক্ষমাণ কক্ষ, অভ্যর্থনাকক্ষ, অফিস কক্ষ, চেইনঞ্জিং রুম, স্টেরিলাইজার রুম, ভান্ডার রুমসহ সামঞ্জস্যপূর্ণ অনন্ত ১৩টি রুম থাকতে হবে।
এছাড়া পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা প্রয়োজনীয়সংখ্যক টয়লেট, প্রসস্ত সিড়ি, জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে (বিল্ডিং তিনতলার অধিক হলে) লিফটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ওটি রুমে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ওটি টেবিল, পর্যাপ্ত ওটি লাইট, সাকার মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ডায়াথারমি মেশিন, জরুরি ওষুধসমূহের ট্রে, রানিং ওয়াটার, অক্সিজেন, আইপিএসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সাধারণ বর্জ্য, ধারালো বর্জ্য, জীবাণুযুক্ত বর্জ্য, তরল বর্জ্যসহ সব ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও থাকা অত্যাবশ্যকীয়। জনবলকাঠামোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, তিন জন ডিউটি ডাক্তার, ছয় জন ডিপ্লোমা নার্স, প্রয়োজনীয় অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনার থাকতে হবে। কিন্তু এসব নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে ছোট ছোট তিন-চার রুমের বাসাবাড়িতে ক্লিনিক গড়ে তুলে চিকিৎসার নামে প্রতারণা চলছে হরদম।
উল্যেখ্য, গত ৩০ জুলাই এই প্রতিষ্ঠানের ভুল চিকিৎসার কারনে বোণ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় কলেজ ছাত্র শিবলু। এ বিষয়ে শিবলুর পিতা হাবিবুর রহমান জানান,আমি এর বিচার চাইতে মানিকগঞ্জ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরে অভিযোগ করা হলে সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেরের মধ্যস্থতায় আমাকে কিছু টাকা দিয়ে চুপ থাকতে বলে। আমার ছেলে বেশ কিছুদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে অবশেষে ঢাকায় বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে গত ২ অক্টোবরে মৃত্যুবরন করে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহেদুর রহমান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: লুৎফর রহমান বলেন, যদি প্রচলিত আইন অমান্য করে বেসরকারী হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর প্রমান মিলে তাহলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, সরকারী বিধি নিষেধ অমান্য করে যদি কোন হাসপাতাল , ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার পরিচালনা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।